মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, লন্ডন
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে তাঁদের একান্ত বৈঠকে কি কি বিষয়ে একমত হয়েছেন? কোন পক্ষই এ নিয়ে মুখ খুলছেন না।
তবে বৈঠকটির আয়োজন ও সাফল্যের সাথে তা সম্পন্ন করার কাজে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তাঁদের ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে দুই নেতার তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার খবর জানা গেছে।
সিদ্ধান্ত ১। নির্বাচন কমিশন আগামী সংসদ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরপরই তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। তাঁর দেশে ফেরার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার কাজ এখন পুরোদমে চলছে ঢাকা ও লন্ডনে।
কিন্তু তারেক রহমান লন্ডনে ড. ইউনূসের সাথে তাঁর সফল বৈঠকের পরপরই দেশে ফেরার টিকিট কিনতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেননি। ড. ইউনূস তাঁকে চটজলদি দেশে ফিরে যেতে রাজি করাতে পারেননি।
তারেক রহমান দেখতে চাইছেন, লন্ডন বৈঠকে ড. ইউনূসের দেয়া শ্রুতিমধুর প্রতিশ্রুতিগুলোর পেছনে তাঁর আন্তরিকতা কতোখানি রয়েছে।
সোজা ভাষায়, তারেক রহমান দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ ও তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন।
সেই জামায়াত আর এই জামায়াত
১৭ বছর আগে দেশ ছেড়ে লন্ডনে নির্বাসনে আসতে বাধ্য হওয়ার সময়ে যে জামায়াতে ইসলামী দলটিকে তারেক চিনতেন, সেই দলের সাথে এখনকার জামায়াতের বিপুল ফারাক রয়েছে, তিনি এটা বোঝেন। এখনকার জামায়াতকে তিনি আরও বুঝে নিতে চাইছেন।
‘এক স্বৈরাচারের বদলে আরেক স্বৈরাচার চাই না’
তারেক রহমান আরও বুঝতে চাইছেন ছাত্রদের দল এনসিপির সত্যিকারের মতিগতি তথা তাদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গতিপ্রকৃতি। ‘এক স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে আমরা ক্ষমতায় আরেক স্বৈরাচার দেখতে চাই না’ - এনসিপি নেতৃবৃন্দের এ রকম খোলামেলা হুঁশিয়ারির পর তারেক রহমানকে বিষয়টি তাঁর অগ্রাধিকার তালিকায় রাখতেই হচ্ছে।
নাটকের পরবর্তী অঙ্কে কোন দৃশ্য মঞ্চায়িত হবে?
অন্তর্বর্তী সরকার এখনো নির্বাচন কমিশনের সাথে নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার জন্যে প্রয়োজনীয় কোনো যোগাযোগ করেনি। রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে নাটকের পরবর্তী অঙ্কে আসলে কোন দৃশ্য মঞ্চায়নের পরিকল্পনা নাট্য পরিচালকের রয়েছে- সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে তারেক ঢাকার ফ্লাইটে উঠছেন না - এটা নিশ্চিত। এমনকি জুলাই সনদের সাথে তাঁর একাত্মতা দেখানোর দাবী থাকলেও তিনি যাচ্ছেন না।
গুলশানে তারেকের বাড়ি প্রস্তুত
তারেক রহমান দেশে ফিরে যাওয়ার পর ঢাকার গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন।
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ করেছিলেন। এত বছর যাবত বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে থাকলেও তাঁর নামে বাড়িটির নামজারি করে দেয়া হচ্ছিলো না। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজপত্র বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে।
তারেক যখন দেশে ফিরবেন, তখন এই বাড়িটিতেই উঠবেন সপরিবারে। বেগম খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’ নামের যে বাড়িতে এখন বসবাস করছেন, তারই সংলগ্ন এই ১৯৬ নম্বর বাড়িটি।
সিদ্ধান্ত ২। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পর তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করা পর্যন্ত তারেক রহমানের সর্ব্বোচ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপিন্সসহ কিছু দেশে নির্বাচনকালীন প্রাণঘাতী সহিংসতার নজিরগুলো বিবেচনায় রেখে তারেক এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ আশ্বাস চেয়েছে। ড. ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারেক বাংলাদেশে ফেরার পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকবেন। (যা সরকার প্রধানের জন্যে নির্ধারিত)
এ প্রসঙ্গে আমাদের ১৩ ফেব্রুয়ারীর সংবাদটির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। সেখানে আমরা বলেছিলামঃ
. তারেক রহমানকে কার্যত দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেন ড. ইউনুস।
. আর উদ্বোধন করে দিলেন তারেকের নির্বাচনী প্রচারণার।
সিদ্ধান্ত ৩। বিএনপি বিশ্বাস করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় যাচ্ছে। আর অন্তর্বর্তী সরকারও এটা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে যে, তারাও বিশ্বাস করেঃ আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করবে। এই প্রেক্ষাপটে আসবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের পালা। সেক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন হবে সাংবিধানিক রক্ষাকবচের আওতায় সেইফ এক্সিট পাওয়া। ক্ষমতায় আসা দল হিসেবে বিএনপিকে তখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যে ওই সেইফ এক্সিটের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে তাঁর উত্থাপিত চাহিদাগুলো ঠিকঠাক মতো পূরণের জন্যে ড. ইউনূসকে স্পষ্ট বলেছেন। সেটা যদি হয়, তাহলে ড. ইউনুসের চাহিদাও ঠিকমতো পূরণ হওয়ার আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন।
লন্ডন বৈঠকের প্রাপ্তিঃ
তারেক রহমানকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি;
বাংলাদেশে তারেকের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আশ্বাস;
তারেকের জন্যে ঢাকায় বাড়িও প্রস্তুত;
অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক সেইফ এক্সিটের কথা পাকা।
তারপরও কথা আছে।
নির্বাচনের তারিখ না পড়া পর্যন্ত তারেক কেন দেশে যাবেন না?
যতোই সফল বৈঠক হোক, আস্থা এখনো শতভাগ নয়?
সরকার কেন নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত-নির্দেশনা পৌঁছানোর কাজ শুরু করছে না?
প্ল্যান এ সামনে রেখে প্ল্যান বি বাস্তবায়নের কোন চেষ্টা?
জোর গুঞ্জনঃ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নয়, নির্বাচন না-কি এপ্রিলের প্রথমার্ধেই হবে।