আজকের এই সুপার কম্পিটিটিভ যুগে ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’ কথাটি বেশ সুপরিচিত ৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্য সবার থেকে নিজেকে আলাদাভাবে এক্সপ্রেস করতে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কোনো তুলনাই হয় না৷পারসোনাল ব্র্যান্ডিং হলো নিজেকে সবার সামনে এমনভাবে প্রোমোট করা যাতে করে বাকি সবার থেকে নিজেকে আলাদাভাবে এক্সপ্রেস করা পসিবল হয়। আজকের লেখায় আমরা আলোকপাত করব পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
১. ক্রেতারা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মানুষকে বেশি বিশ্বাস করে
ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য যেমন ভালো পণ্য জরুরি, তেমনি প্রতিষ্ঠানের পেছনের মানুষগুলোর নিজের খ্যাতিও মানুষের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্য। বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞাপনের থেকে সত্যিকার মানুষের মুখে কোনো পণ্য বা সেবার ব্যাপারে মতামতের ওপর বেশি নির্ভর করে।নতুন কিছু কিনতে গেলে তারা শুধুমাত্র চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রচারণার ওপর নির্ভর না করে পরিচিতজনদের মতামত নেয়, ইউটিউব বা অন্য ওয়েবসাইটগুলোতে ইউজার রিভিউ দেখে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি জরিপে দেখা যায় আমেরিকা বা ইউকের মতো দেশগুলোর ৮৮% ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনের থেকে ইন্টারনেটে অপরিচিত মানুষের দেওয়া রিভিউ বেশি বিশ্বাস করে। এর মাঝে ৮৫% ক্রেতা একটি প্রডাক্ট বা সার্ভিসের পেছনে টাকা খরচ করার আগে অন্তত ১০টি রিভিউ পড়ে থাকেন।বহুকাল ধরেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে মানুষের বিশ্বাস দিনে দিনে কমে আসছে।এর অন্যতম কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ সময়েই প্রচারের অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দেয় যা তারা বাস্তবে ক্রেতাদের দিতে পারে না। এ কারণে আপনার পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে নিজেকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরাটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন একটি আইফোন কিনি, তখন অবচেতনেই স্টিভ জবসের ব্যাপারটা আমাদের মাথায় চলে আসে। আমরা জানি স্টিভ জবস কত বড় একজন টেক বিশেষজ্ঞ।সেকারনেই চোখ বন্ধ করে আমরা তাঁর পণ্যটি কিনতে পারি।
২. ফলোয়ার = বিক্রয়
আপনার যদি ব্যবসার সার্বিক দিক, বা কোনও একটি পণ্য বা সেবার বিষয়ে ভাল জানাশোনা থাকে, আপনিও সোশ্যাল মিডিয়াতে সেগুলো প্রচার করে একটি ভালো প্রফাইল দাঁড় করাতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকবে, এবং সেই সাথে আপনার মতামতও মানুষ গুরুত্বের সাথে নেবে।
আমেরিকাতে কার্দাশিয়ানদের নামে যে ফ্যাশন বা কসমেটিকস পণ্যই চালানো হোক না কেন, সেগুলো হটকেকের মতো বিক্রি হয়। বিভিন্ন কম্পানি তাদের বেশ মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের নামে পণ্য বের করার অনুমতি নেয়।কার্দাশিয়ান বা এই ধরনের তারকাদের সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র তা হলো এদের সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার বেস। প্রত্যেকের ইন্সটাগ্রাম, টুইটারে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার, এবং এদের বেশিরভাগই তাদের প্রচার করা পণ্যগুলোর ক্রেতায় পরিণত হয়।
এই কারণেই জনপ্রিয় তারকাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো হয়। কিন্তু বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে মানুষ টেলিভিশনের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটায়। আর টেলিভিশনের চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর সুযোগ-সুবিধা বেশি। অনেক উদ্যোক্তাই এই কাজটি করছেন।
ফ্রি মার্কেটিং
আপনার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার জনপ্রিয় উপস্থিতি আসলে একটি কার্যকর আত্মপ্রচারের ফলাফল। টেলিভিশন মিডিয়াতে একটি জনপ্রিয় উপস্থিতি অনেক সময় ও কষ্টের ব্যাপার। আর আপনি যদি সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং করতে চান, তবে আপনার পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে অনেকগুলো টাকা। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল বা ফেসবুক পেজ রীতিমতো ফ্রি।
যদি সঠিকভাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন, তবে নিজেকে একজন “মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি, বলতে গেলে নামমাত্র খরচে আপনার পণ্যের জন্য বিশাল একটি কাস্টোমার বেস সৃষ্টি করতে পারবেন। এক গবেষণায় দেখা যায়, বড় বড় ফান্ড বের করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এনজিওগুলোর চেয়ে মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সাররা ১০ গুণ বেশি ফান্ড জোগাড় করতে পারেন। আপনি যে ব্যবসাতেই থাকেন না কেন, একটি পার্সোনাল ব্লগ বা সোশ্যাল পেজ আপনার ব্যবসার প্রচারকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। ইলন মাস্ক বা ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মত বড় বড় বিলিওনেয়ার ব্যবসায়িরা নিয়ম করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁদের নিজেদের ও ব্যবসার ব্যাপারে পোস্ট দেন এবং ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ করেন।
পরিশিষ্ট
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে, শুধু নিজের ব্যবসার প্রচার করলেই চলবে না। তাহলে কিন্তু ফলোয়ার বা ভক্তরা আপনার কথাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেবে না। আপনাকে পুরো ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলতে হবে। নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে। এর বাইরেও নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা, বিভিন্ন ইস্যু ও সামাজিক বিষয় নিয়ে নিজের মতামত, ও নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে হবে, পোস্ট করতে হবে। আপনার ব্যবসার পাশাপাশি আপনার বাগানে ফোটা নতুন ফুলটি নিয়ে পোস্ট দিতে হবে, আপনার বাচ্চার নতুন দুষ্টুমি নিয়ে পোস্ট দিতে হবে। সোজা কথা, ফলোয়াররা যেন আপনাকে আপন ভাবতে পারে। একটি ব্যবসা হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে নিজের প্রচার করুন। প্রথমেই বলা হয়েছে, মানুষ কম্পানিকে নয়, মানুষকে বিশ্বাস করে।