যুক্তরাজ্য

১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:১১
আরও খবর

HMRC-এর বিরুদ্ধে প্রাইভেসি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ: ভুল ভ্রমণ তথ্যের ভিত্তিতে শিশুভাতা বন্ধ

12478_1221.jpg

যুক্তরাজ্যে হাজারো পরিবারের শিশুভাতা ভুলভাবে বন্ধ করার ঘটনায় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা। হোম অফিসের অসম্পূর্ণ ভ্রমণ তথ্য ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কর কর্তৃপক্ষ এইচএমআরসি। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনফরমেশন কমিশনার্স অফিস (আইসিও) ইতোমধ্যেই কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের কর্মসংস্থান ও পেনশন বিষয়ক মুখপাত্র স্টিভ ডার্লিং ঘটনাটিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কল্যাণব্যবস্থায় সঠিক নজরদারির অভাবের ফলে সাধারণ মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে। সরকারকে ভুলের কারণ ব্যাখ্যা করা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদান এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এইচএমআরসি জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১,৯৭৯ পরিবারের ভাতা পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে তারা দাবি করেছে, ২৩,৫০০ পরিবারের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাতা যথাযথ কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। ভুলভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সমাধানের জন্য চিঠিতে দেওয়া হেল্পলাইনে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়।

গত সপ্তাহে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিকরা জানতে পারেন, যেসব যাত্রী ডাবলিন বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের তথ্য ভুলভাবে ‘দেশত্যাগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে জানা যায়, তিন বছর আগের ছুটির ভ্রমণ থেকেও অনেকের তথ্য ‘ওয়ান-ওয়ে’ টিকিট হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। এমনকি যেসব যাত্রীরা শেষ মুহূর্তে অসুস্থতার কারণে ফ্লাইটে উঠতে পারেননি, তাদেরও ভাতা বন্ধ হয়েছে। নতুন অভিযোগের মধ্যে একজন শিক্ষিকার নাম এসেছে; স্কুলভ্রমণে অফিসের মাধ্যমে টিকিট কাটা হওয়ায় তিনি ফেরার তথ্য প্রমাণ করতে পারেননি।

গোপনীয়তা আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এলেনর ডুস বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিকতার নীতিই প্রধান। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে তা স্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘন। আইসিও জানিয়েছে, সরকারি সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময় আইনসঙ্গত হতে হবে, তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তা ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ হওয়া চলবে না।

হোম অফিস নিজস্ব নথিতে উল্লেখ করেছে, ভ্রমণ ইতিহাস শুধুমাত্র ‘ভ্রমণের অভিপ্রায়’ নির্দেশ করে এবং তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। সরকারি কাজে প্রয়োজন হলে সরাসরি এয়ারলাইনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়।

আইনি চাপে পড়ে এইচএমআরসি সম্প্রতি চাইল্ড বেনিফিট স্থগিতের প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ করেছে এবং সুবিধাভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের পরেই পদক্ষেপ নেওয়ার নিয়ম চালু করেছে। পাশাপাশি ট্রাভেল ডেটা এখন থেকে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কর (PAYE) তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে জনসাধারণের অর্থ সুরক্ষিত থাকলেও নাগরিকদের অধিকারও রক্ষা পাবে।

সরকার বলছে, প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রতারণা ঠেকানোর উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে আইনি বিশেষজ্ঞ ডুস জানান, মানবাধিকার বিবেচনায় এই পদ্ধতির যুক্তিসঙ্গততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভুল তথ্যের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় যে ব্যাঘাত ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা এই প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করে।

এইচএমআরসি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ইউকে জিডিপিআরসহ সংশ্লিষ্ট সকল ডেটা আইন মেনে কাজ করেছে।

সর্বাধিক পঠিত


আরও খবর
ভিডিও