যুক্তরাজ্য

১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:১২
আরও খবর

ডিপোর্টেশনের শঙ্কায় যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

13040_Screenshot 2025-12-14 at 6.56.18 pm.jpeg

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ঘানার শিক্ষার্থীরা মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। নিজ দেশের সরকারের প্রতিশ্রুত বৃত্তি, টিউশন ফি ও জীবনযাত্রা ভাতা দীর্ঘদিন পরিশোধ না হওয়ায় বহু শিক্ষার্থী এখন বহিষ্কার ও দেশছাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শতাধিক ঘানিয়ান পিএইচডি শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি দল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে হস্তক্ষেপ চেয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে আবেদন জানিয়েছে, যাতে ঘানা সরকারকে বকেয়া অর্থ পরিশোধে চাপ দেওয়া যায়।

শিক্ষার্থীদের সংগঠনের সভাপতি প্রিন্স কমলা বানসাহ জানান, টিউশন ফি পরিশোধ না হওয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এর ফলে হোম অফিসের পক্ষ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। অনেককে আবাসন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ কেউ ঋণ করে কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

বানসাহ বলেন, পিএইচডির মতো কঠিন গবেষণার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করে জীবনধারণ করা অত্যন্ত কষ্টকর। অনেক শিক্ষার্থী দেশে থাকা পরিবার বা পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, সংকট এতটাই ভয়াবহ যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভাড়া পরিশোধ না করতে পেরে আদালতের মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ কেউ খাবারের টাকার অভাবে ফুড ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এই সংকটে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, রবার্ট গর্ডন ইউনিভার্সিটি (অ্যাবারডিন), নটিংহ্যাম, ব্র্যাডফোর্ড, ওয়ারউইক, লিংকন ও লিভারপুলসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

ঘানা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জন মাহামার নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর তারা আগের সরকারের সময়কালের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রায় ১১০টি যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানের কাছে আনুমানিক ৩ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড ঋণের বিষয়টি খুঁজে পায়। ঘানা স্কলারশিপ সেক্রেটারিয়েটের রেজিস্ট্রার অ্যালেক্স কোয়াকু আসাফো-আগিয়েই জানান, আগের সরকারের দেওয়া সব বৃত্তির একটি অডিট চলমান রয়েছে এবং যুক্তরাজ্যে নতুন বৃত্তি দেওয়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সমঝোতা করেন, তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরে সেই চুক্তি বাতিল করেছে। তার দাবি, যুক্তরাজ্যের অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতি এড়াতে বিষয়টি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে এ পর্যন্ত মোট কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

প্রায় ৩০ জন ঘানিয়ান পিএইচডি শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ২০২৪ সাল থেকে তাদের টিউশন ফি পরিশোধ করা হয়নি। এর ফলে কেউ কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি সম্পন্ন করতে, গবেষণাপত্র জমা দিতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা ব্যবহার করতে পারছেন না। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে তিন বছরের বেশি সময় ধরে জীবনযাত্রা ভাতাও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি সমর্থনপত্র নবায়ন না করায় ভিসা জটিলতাও তৈরি হয়েছে।

বানসাহ বলেন, নতুন সরকার জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এলেও বাস্তবতা হলো—সরকার এই সংকট সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল, তবুও এখনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যুক্তরাজ্যে এত বড় সমস্যা চলমান থাকা সত্ত্বেও সরকার কীভাবে নতুন বিদেশি বৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখছে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের সংকট নতুন নয়। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে পড়ুয়া ১৮০ জনের বেশি ঘানিয়ান শিক্ষার্থী একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে নাইজেরিয়ান শিক্ষার্থীরা লন্ডনে তাদের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শত শত শিক্ষার্থী সরকারি বৃত্তির অর্থ বিলম্ব হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে উচ্ছেদের মুখে পড়েছিলেন।

সর্বাধিক পঠিত


আরও খবর
ভিডিও