
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ১৮ বছর আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা এক নারী অবশেষে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের কারণে তার নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল হোম অফিস, তবে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছে।
এই মামলাটি নতুন একটি নীতির আওতায় প্রথম সফল উদাহরণ বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত ওই নীতিতে বলা হয়, অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা শরণার্থীদের সাধারণত ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না, কারণ তারা ‘সু-চরিত্র’ শর্ত পূরণ করেন না। শরণার্থী কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, এই নীতির ফলে অন্তত ৭১ হাজার শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
৪৮ বছর বয়সী ওই নারী, যার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, কঙ্গোতে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে কারাবন্দি হন এবং ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তীতে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি এক দালালের সহায়তায় ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে প্রথমে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি এবং সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন। যুক্তরাজ্যে পৌঁছে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং তার নির্যাতনের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় তাকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বর্তমানে তিনি তিন সন্তানের জননী, যাদের সবাই ব্রিটিশ নাগরিক। তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং তিনি স্থানীয় গির্জায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে সমাজে অবদান রাখছেন। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১,৬০০ পাউন্ড ফি দিয়ে তিনি নাগরিকত্বের আবেদন করেন। তবে হোম অফিস ‘সু-চরিত্র’ ও অতীতে অবৈধ প্রবেশের যুক্তি দেখিয়ে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং জানায়, অবৈধ প্রবেশের ঘটনা যত পুরোনোই হোক, সাধারণত এমন আবেদন মঞ্জুর করা হয় না।
এরপর তার আইনজীবীরা আদালতে আবেদনটি চ্যালেঞ্জ করেন। তারা যুক্তি দেন, ১৮ বছর আগের পরিস্থিতিতে অবৈধ প্রবেশকে উপেক্ষা করা উচিত এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শরণার্থীরা প্রয়োজনে ভুয়া নথি ব্যবহার করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। তারা আরও বলেন, হোম অফিসের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শেষ পর্যন্ত ৮ ডিসেম্বর হোম অফিস ওই নারীকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। সিদ্ধান্ত বদলের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নিজ দেশে তিনি ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গেছেন এবং নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছিলেন। এখন সিদ্ধান্ত পাল্টে যাওয়ায় তিনি নিজেকে মুক্ত ও স্বাধীন মনে করছেন।
নারীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী উইলসনস সলিসিটরসের আইনজীবী জেড পেনিংটন বলেন, এত বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের কারণে একজন স্বীকৃত শরণার্থীকে এখন ‘অসু-চরিত্রের’ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত নয়, বিশেষ করে যখন তিনি সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং তার কোনো অপরাধের ইতিহাস নেই।
এ বিষয়ে হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন, তারা সাধারণত পৃথক মামলার বিষয়ে মন্তব্য করেন না, তবে প্রতিটি নাগরিকত্বের আবেদন প্রমাণের ভিত্তিতে নিজ নিজ গুণাগুণ অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়।