যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সোমবার বলেছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর ফ্লাইট ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু করতে চলেছেন তিনি।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসের বিরোধিতার পরও সুনাক এ সংক্রান্ত আইন পাসে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুনাক জানান, তিনি পরিকল্পনার বিস্তারিত খুঁটিনাটির রূপরেখা প্রকাশ করবেন না। তবে তার সরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছে।
সুনাক বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলছি যে, আমরা বিমানঘাঁটি প্রস্তুত রেখেছি। বাণিজ্যিক বিমান ভাড়া করেছি এবং অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে পাহারা দিয়ে রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০ স্টাফকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আগামী দিনগুলোতে আরও ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
“আমরা প্রস্তুত। বিমানও জায়গামত আছে। এই ফ্লাইটগুলো যাবেই, তা যাই ঘটুক না কেন। আর কোনও যদি,কিন্তু নয়। এই ফ্লাইটগুলো রুয়ান্ডায় যাবে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন সুনাক।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন সে অনুযায়ী, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রথম ফ্লাইট জুলাইয়ে রুয়ান্ডায় রওনা হবে।
মানবপাচার, চোরাচালান নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া এবং ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল ঠেকাতে রুয়ান্ডা অভিবাসন নীতিতে জোর দিয়ে আসছে সুনাকের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।
পরিকল্পনাটি যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের আগে দলের ভাগ্য ফেরাবে বলেই আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী, যুক্তরাজ্য থেকে শ’ শ’ অবিবাসন-প্রত্যাশীকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাতে পাঠানো হবে এবং তারা সেখানেই বাস করবেন।
যুক্তরাজ্য ইতোমধ্য়েই রুয়ান্ডাকে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য বলছে, এই নিয়ম চালু হলে অবিবাসীরা আর যুক্তরাজ্যে ভিড় জমাবে না।
আফ্রিকা,মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া থেকে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী সম্প্রতি কয়েকবছরে ছোট ছোট নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছে। এই ঢল থামানোই ব্রিটিশ সরকারের লক্ষ্য।
তবে সমালোচকরা বলছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা অমানবিক। তাছাড়া, পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি বসবাসের জন্য নিরাপদ স্থান নয়।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে বিতর্কিত এই রুয়ান্ডা পরিকল্পনা পাস করাতে পেরেছেন সুনাক। তবে উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে এর বিরোধিতা চলে আসছে।
উচ্চকক্ষের কিছু সদস্য নতুন এই আইনে কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীর জন্য রক্ষাকবচ চাইছেন। বিশেষত, যে সব আফগান ব্রিটিশ সেনাদেরকেসহায়তা করেছিল তাদের জন্য। তাছাড়া,রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠনের পক্ষে তারা।
উচ্চকক্ষে সুনাকের রক্ষণশীল সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়েই হাউজ অব লর্ডস গঠিত৷ এ কক্ষের সদস্যরা অনির্বাচিত। হাউস অব লর্ডস চাইলে বিল অনুমোদনে দেরি করতে পারে বা সংশোধনীও আনতে পারে৷ কিন্তু নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই৷
সোমবার রুয়ান্ডা সংক্রান্ত বিলটি নির্বাচিত সদস্যদের হাউজ অব কমন্সে ফেরত যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আইনপ্রণেতারা উচ্চকক্ষের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো অপসারণ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলেছেন, বিলটি পাস করাতে সরকার প্রয়োজনে সোমবার রাতে পার্লামেন্টকে অধিবেশন বসাতে বাধ্য করবে।
সুনাক বলেছেন, আইন পাস হতেই সরকার দ্রুত কাজ শুরু করবে। রুয়ান্ডা নীতির প্রস্তাব উঠেছিল দুবছর আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে ঢোকা কোনও অভিবাসনপ্রত্যাশীকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হয়নি।
গত বছর বিলটি প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রত্যাশীদেরকে পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। তবে সুনাক এতেও দমে যাননি। নতুন বিল পার্লামেন্টে তুলেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত হাউস অব কমন্সে পাস করিয়েছেন বিলটি।
সূত্র: bdnews24