বিশেষ খবর


অতিরিক্ত এনার্জি ড্রিংক সেবনে চলার ক্ষমতা হারালেন ২২ বছর বয়সী রুশ যুবক

12816_Screenshot 2025-11-25 at 2.42.18 pm.jpeg

রাশিয়ার ২২ বছর বয়সী আরতেম নামের এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত এনার্জি ড্রিংক পান করার ফলে ভয়াবহ শারীরিক জটিলতায় ভুগে এক সময় হাঁটার সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর করুণ গল্প এখন রাশিয়া ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কিশোর বয়স থেকেই ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আরতেম। রাতভর গেম খেলার জন্য জেগে থাকতে তিনি প্রথমে দিনে একটি করে এনার্জি ড্রিংক পান করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর নির্ভরতা এতটাই বেড়ে যায় যে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ ক্যান পর্যন্ত পান করতেন, অনেক সময় খালি পেটে। তাঁর মা জানান, ছেলে যেন গেম থেকে উঠে খাবার না খায়—সেজন্যই বেশিরভাগ সময় খালি পেটে এসব পানীয় পান করত।

প্রথম বড় স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয় তাঁর বয়স যখন মাত্র ১৬। তীব্র পেটব্যথা, বমি ও বমিবমিভাব নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁর অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ—প্যানক্রিয়াটাইটিস ধরা পড়ে। চিকিৎসার পরও রোগটি বারবার ফিরে আসে। পরবর্তীতে তাঁর অগ্ন্যাশয়ে একটি সিস্ট তৈরি হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

তৃতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় হঠাৎ করে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অগ্ন্যাশয়ে পিউরুলেন্ট নেক্রোসিস তৈরি হয়—যেখানে অঙ্গের অংশবিশেষ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত অগ্ন্যাশয় থেকে বিষাক্ত পদার্থ রক্তে ছড়িয়ে পুরো শরীরকে বিষাক্ত করে তোলে। এই অবস্থা সৃষ্টি করে ভয়াবহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকলতা। ঠিক সেই সময়ই আরতেম তাঁর দুই পায়ের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

তাঁর মা জানান, “অগ্ন্যাশয় পুড়ে নষ্ট হতে শুরু করে। সঙ্গে লিভার, প্লীহাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানসিক ধাক্কা এতটাই ছিল যে সে কথা বলার ক্ষমতাও হারায়। এরপর পা নিস্তেজ হয়ে পড়ে—একসময় আর দাঁড়াতেই পারছিল না।”

রুশ সংবাদমাধ্যম ‘উরা নিউজ’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় আট বছর ধরে গেমসের প্রতি আসক্ত ছিলেন আরতেম। রাত জেগে খেলার অভ্যাস বজায় রাখতে তিনি নিয়মিত এনার্জি ড্রিংকের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। দীর্ঘদিনের এই চাপ তাঁর শরীরকে একসময় সম্পূর্ণ ভেঙে দেয়। ২০২৪ সালের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন, আর দাঁড়াতে পারছেন না।

বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরতেম। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে তাঁর অগ্ন্যাশয়ের অবস্থার কারণে ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এনার্জি ড্রিংকে থাকা অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও চিনি দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। একটি ৫০০ মিলিলিটারের এনার্জি ড্রিংকে থাকে প্রায় চৌদ্দ প্যাকেট চিনির সমপরিমাণ মিষ্টতা এবং পাঁচ ক্যান কোকাকোলার সমান ক্যাফেইন। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করতে পরামর্শ দেয়। অথচ একাধিক ক্যান এনার্জি ড্রিংক পান করলে সহজেই এই সীমা অতিক্রম করে যায়, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা, স্নায়ুর ক্ষতি এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

আরতেম এখন বলতে পারেন শুধু—“আমি হাঁটতে পারি না।” তাঁর পরিবার বিশ্বাস করে, বছরের পর বছর অনিয়ন্ত্রিত এনার্জি ড্রিংক সেবনই এই ভয়াবহ পরিণতির মূল কারণ।

এই ঘটনাটি ইউরোপজুড়ে এনার্জি ড্রিংক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যে ১৬ বছরের কম বয়সিদের কাছে এনার্জি ড্রিংক বিক্রি নিষিদ্ধ। একই পথে হাঁটছে পর্তুগালও। স্পেন, জার্মানি, স্লোভেনিয়া ও হাঙ্গেরিসহ আরও কয়েকটি দেশ তরুণদের সুরক্ষায় নতুন আইন প্রণয়নের ভাবনা-চিন্তা করছে।

সর্বাধিক পঠিত


ভিডিও